কেমন দেখতে হবে ভবিষ্যতের স্মার্ট ফোন গুলো? কয়েকটি ভবিষ্যৎবাণী – What will smartphones of the future look like?

Posted by

১৯৯৩ সালে যখন সিটিসেল বাংলাদেশে আসে, তখন হাতে একটা মোবাইল ফোন থাকা ছিল স্বপ্নের মত। অনেকটা এখনকার দিনে বিএমডব্লিউ গাড়ি থাকার মত। তাও সেটা ছিল বড় অ্যান্টেনা যুক্ত খুবই সাধারণ ফোন, যাতে কল করা ছাড়া কিছুই করা যেত না। যদি কোন ফোনে কয়েকটি রিংটোন থাকত কিংবা কয়েক ভয়েস রেকর্ড করা যেত, সেটাই ছিল অনেক কিছু। তখন আপনি যদি বলতেন, ভবিষ্যতে এখনকার মত উচ্চ প্রযুক্তির ফোন গুলো আসবে তাহলে আপনাকে লোকে হয়ত পাগল বলত। এতদিনে প্রযুক্তি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। ঝলমলে বড় টাচস্ক্রীন, চিত্তাকর্ষক ক্যামেরা এবং থ্রিডি ফেচ রিকগনিশনের মত উচ্চ-প্রযুক্তির ফিচার গুলো দিয়ে আজকের ফোন গুলো আসলেই খেলা দেখিয়েছে। এখন আমরা গান শোনার জন্য, গেম খেলার জন্য, ইউটিউবের ভিডিও দেখার জন্য ইত্যাদি নানা কাজে মোবাইল ব্যবহার করি। কিন্তু ২০ বছর আগেও যেখানে শুধু কল করার জন্য মোবাইল ব্যবহার করা হত।
তাহলে ভেবে দেখুন ১০, ২০ বা ৫০ বছর পরে এই মোবাইল ফোন গুলো দিয়ে কিই না করা যেতে পারে। আর এই মোবাইল ফোন গুলো দেখতেই বা কেমন হবে? আসুন দেখি আমার ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করা গবেষকদের ভবিষ্যৎবাণী গুলো।

চিন্তা নিয়ন্ত্রিতঃ
আগে যেখানে আমরা শুধু কীবোর্ড বাটন দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করতাম, এখন স্মার্ট ফোনে সেটা পুরোপুরি টাচ দ্বারা প্রতিষ্ঠাপিত হয়েছে। আবার গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অ্যাপলের সিরির মত সার্ভিস দিয়ে আমরা শুধু কণ্ঠ দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারি।

এখন ধারণা করা হয় যে ভবিষ্যতে এর জায়গা নেবে mind control বা চিন্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ। এর মাধ্যমে যে গুলো আমরা টাচ বা কণ্ঠ দিয়ে করি সেগুলো চিন্তা দ্বারা করতে পারব। আপনি যা ভাববেন বা চিন্তা করবেন সেটাই হবে ফোনে। আপনি একটা অ্যাপ চালু করার কথা চিন্তা করলেই সেটি চালু হয়ে যাবে। আপনি ইউটিউবে একটা নির্দিষ্ট গান শোনার কথা ভাবলে সেই গান টিই চালু হবে। আপনি চিন্তা দিয়েই একটি বার্তা লিখতে পারবেন, পর্দার উজ্জ্বলতা কম বেশি করতে পারবেন।
চিন্তা দিয়ে কাজ করার কারনে আপনি খুব দ্রুত ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে আপনাকে কোন অ্যাপ চালু করার জন্য মোবাইলের উপর নিচে সুইপ করে খুঁজে বেড়ানো লাগবে না। আপনি যে কোন কাজ করবেন জাস্ট একটা হৃৎস্পন্দনে।
যদিও আমরা এখনও এরকম কিছু থেকে অনেক দূরে। কিন্তু গবেষকরা এটা নিয়ে অনেক এগিয়েছেন। ফেচবুক কিন্তু ২০১৭ সালেই ফেচবুক বিল্ডিং ডিভিশন ৮ কে গবেষণা করতে দিয়েছে যেন মানুষ চিন্তা(Mind) দিয়ে টাইপ করতে পারে। টাইপিং গতির লক্ষ ধরা হয়েছে ১০০ শব্দ প্রতি মিনিটে, যা আমাদের স্মার্টফোনে টাইপ করার সাথে তুলনা করলে পাঁচ গুন বেশি।
এমআইটি-র বিজ্ঞানীরা এমন একটি যন্ত্রের সাথে কাজ করছেন যার নাম ‘ অল্ডইগো(AlterEgo)’, যা ব্যবহারকারীকে তাদের চিন্তা-ভাবনা দিয়ে মেশিনের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়। এখানে আশা করা যায় ভবিষ্যতে এই ধরনের কোন প্রযুক্তি আসলে আপনার মাথার সাথে লাগানো অদ্ভুত তারযুক্ত সেন্সরটি পরতে প্রয়োজন হবে না।
যদিও আপনার চিন্তা দিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহারের ধারনা এখন পাগলামি বলে মনে হয়, কিন্তু এটি এক সময় আসবে!

ওভার দ্য এয়ার চার্জিংঃ
একটা জিনিস কিন্তু আপনাকে মানতেই হবে যে গড়পড়তা স্মার্টফোনের ব্যাটারি লাইফ খুব একটা বেশি নয়। এমনকি যদি বৃহদায়তন 4,200mAh ব্যাটারির সঙ্গে, সঙ্গী 20 প্রো মত একটি উচ্চ ব্যাটারি খাদক ফোন থাকে, তাও আপনি শুধুমাত্র গড় ব্যবহারে প্রায় দুই দিন চলবে, একবার যদি চার্জ ফুরিয়ে যায়, তাহলে আপনাকে হয় কয়েক ঘণ্টার জন্য এটি প্লাগ ইন রাখতে হবে অথবা একটি ওয়্যারলেস চার্জিং প্যাডে রাখতে হবে, যদি এটা আপনার ফোন সমর্থনকরে।


ওভার দ্য এয়ার চার্জিং থাকলে, আপনাকে আর ফোন, চার্জ করার জন্য ফেলে রাখতে হবে না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই গবেষণা চলছে সমাধানের। যদিও এই জিনিসটা আমার কাছে একটু অদ্ভুত ঠেকেছে। তার ছাড়া ইন্ডাকশন উপায়ে হয়ত আমরা ওয়্যারলেস পড দিয়ে চার্জ করতে পারি। কিন্তু বাতাসের মাধ্যমে চার্জ! পুরাই অবিশ্বাস্য!
যদিও বিষয়টি ভবিষ্যতে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু ‘এনার্জিস’ নামের একটি কোম্পানি বিমান থেকে ডিভাইস চার্জ করার প্রযুক্তি তৈরি করেছে। আপনার ফোন টি ওয়াটআপ মিড ফিল্ড ট্রান্সমিটার যন্ত্রের তিন ফুটের মধ্যে রাখলে এটি চার্জ করা শুরু করবে । একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করুন যেখানে এই ট্রান্সমিটার অনেক বেশি শক্তিশালী। বড় দূরত্বে ডিভাইস ওভার এয়ার চার্জ করতে পারে এবং তা সারা দেশ জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে, ঠিক আজ সেল ফোন টাওয়ার মত। দূর থেকে ক্রমাগত আপনার স্মার্টফোনে চার্জ করা হবে। এই চার্জিং ট্রান্সমিটার এত শক্তিশালী হবে যে, তা আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি সবসময় 100 শতাংশ রাখবে । আপনি কখনো ব্যাটারির চার্জ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না এবং দরকারি সময়ে ঐ বিরক্তিকর চার্জিং এর জন্য স্মার্টফোন ফেলে রাখতে হবে না।
প্রযুক্তি তো আর স্মার্টফোনের একচেটিয়া নয়। এটা আপনার সব গ্যাজেট, ক্রোমবই থেকে ব্লুটুথ হেড-ফোন, স্মার্টঘড়ি সব পোর্টেবল ডিভাইস চার্জ করা যাবে। এমনকি এটা আপনার বৈদ্যুতিক গাড়িও চার্জ করতে পারে, যাতে আমরা ভবিষ্যতে সম্ভবত সবাই ড্রাইভিং করব।

রং পরিবর্তন করাঃ


ফোন বিভিন্ন রঙে আসে এবং প্রিয় রঙের বেছে নিতে প্রায়ই সমস্যা হয়। কালো, রূপালী এবং সাদা একটু ক্লাসিক ভাব প্রদান করলেও, অনেক সময় বোরিং লাগে। লাল, সবুজ, বা বেগুনি রঙ থাকলে আরও ভাল দেখায়, কিন্তু এর ফলে আপনাকে কম পেশাদারী মনে হতে পারে। ভবিষ্যতের স্মার্টফোনের সঙ্গে, আপনাকে হয়তো আর রঙ পছন্দ করতে হবে না ।
একটি ফোন কল্পনা করুন যার পেছনের অংশ গ্লাসের মত স্বচ্ছ উপাদান থেকে তৈরি এবং এর থেকে বিভিন্ন রঙের আলো বের হচ্ছে। ডিভাইসটির ভেতরে এক বা একাধিক LED থাকবে, এর রং আপনি ফোনের সেটিংস থেকে পরিবর্তন করতে পারেন (অথবা আপনার চিন্তা দিয়ে হতে পারে?! আপনি যখন কমল রঙ পছন্দ করবেন, পুরো ব্যাক কভারটি সম্পূর্ণরূপে কমলা রঙ ধারণ করবে যেন এটি এই রঙেই পেইন্ট করা ছিল।
এই প্রযুক্তি আপনাকে যত বার আপনি চান ততবার বিভিন্ন রং এর মধ্যে স্যুইচ করতে দেবে, এছাড়াও একটি দৈনিক ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রং পরিবর্তন করার একটি মোড থাকতে পারে। আবার কয়েকটি LED যুক্ত থাকলে, আপনি রং তৈরি করতে পারেন, যেমন নোট ৭ এ আছে।
এই নতুন গ্লাস-এর উপাদান মূল ডিসপ্লের উপাদানেই তৈরি হবে, তাই ফোন ড্রপ হলেও তা ভেঙে যাবার চিন্তা করতে হবে না।

ভবিষ্যতে স্মার্ট ফোন কি আসলেই স্মার্টফোন থাকবে:


ভবিষ্যতে স্মার্টফোন গুলো বলা যায় আর স্মার্ট ফোন থাকবে না। নতুন কোন যন্ত্র হয়তো এ স্মার্টফোনের জায়গা নেবে। যে যন্ত্র দিয়ে আমরা স্মার্ট ফোন এর সকল কাজ করতে পারি। অনেকে মনে করেন এখনকার চশমার মতো হয়তো কোন যন্ত্র এ জায়গা নিতে পারে। আমরা জানি যে এরকম যন্ত্র আছে যেমন গুগল গ্লাস কিন্তু এটা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে খুব একটা সাফল্য পায়নি। তবে আমরা যে গ্লাস থেকে কথা বলছি সেটি দিয়ে আপনি কল করতে এবং রিসিভ করতে পারবেন। যখন কেউ আপনাকে ফোন দেবে তার নাম আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। আপনি ইয়ারফোন ছাড়া হ্যালো বলার সাথে সাথে কল রিসিভ হয়ে যাবে কারণ এতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তা হল বোন কন্ডাকশন প্রযুক্তি বা এর থেকেও অত্যাধুনিক কিছু। এর মাধ্যমে আপনি গান শুনতে পারবেন, চলার সময় প্রতি পদে পদে কোন দিকে যেতে হবে তার দিক নির্দেশনা পাবেন আবার আপনার কাছে আসা মেইল গুলোও পড়তে পারবেন। এআর টেকনোলজি ব্যবহার করায় সবকিছুই আপনার চোখের সামনে ভেসে থাকবে।
তবে মনে করবেন না যে এতে ক্যামেরার কোন ব্যবস্থা রাখা হবে না। চশমার ফ্রেমের সাথেই লাগানো থাকবে ক্ষুদ্র ক্যামেরা। আপনি যখনি ‘স্নাপ’ শব্দটি উচ্চারণ করবেন তখনি আপনি যা দেখছেন তা ছবি হয়ে ভেসে থাকবে।

যদি এরকম হয় তাহলে তো আর টিকেট কিনে সিনেমা হলে যাওয়া লাগবে না কিংবা বিশাল বড় স্ক্রিনের টিভিও কেনা লাগবে না। কেননা ‘এআর’ প্রযুক্তির সুবাদে আপনি যখন তখন থ্রিডি ছবি দেখতে পারবেন। শুধু তাই নয় থ্রিডি হলোগ্রামের দ্বারা আপনি ঘরে বসেই আপনার বন্ধুর জন্ম দিনে অংশ গ্রহণ করছেন আর হ্যাপি বার্থডের গান গাইছেন। এই প্রযুক্তি আসলে মানুষের জীবন যাপন পুরোটাই বদলে দেবে। তাই এই প্রযুক্তি নিয়ে অনেক কোম্পানি বেশ গুরুপ্তের সঙ্গে গবেষণা করছে। যদিও কিছু কিছু আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যেমন গুগল ও ইন্টেলের বানানো স্মার্ট গ্লাস, মাইক্রোসফটের হলোলেন্স আর আমাজন ফোকালস নামের একটা প্রোজেক্টেও এটা নিয়ে কাজ করছে।
আবার এটাকে উন্নত করে এমনও করা হতে পারে যে আপনার ব্রেনের সাথেই কম্পিউটার চিপ লাগিয়ে দেওয়া হল!

Leave a Reply